গবেষণায় দেখা গেছে, ডেটের প্রস্তাব দেয়া পুরুষের ৫৬ শতাংশের ক্ষেত্রে যৌনতার ঘটনা ঘটেছে। আর নারীর আহ্বান করা ডেটের ৬৩ শতাংশ ক্ষেত্রেই ছিল যৌনতা।
সাধারণভাবে মনে করা হয়, রোমান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পুরুষের পছন্দই প্রাধান্য পায় বেশি। তবে নতুন এক গবেষণা দেখাচ্ছে, এ অবস্থার বদল ঘটতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাসের একদল গবেষক ২০ হাজার বিষমকামী (হেটেরোসেক্সুয়াল) বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের ওপর জরিপ চালিয়ে পেয়েছেন বিস্ময়কর তথ্য।
দেখা গেছে, নারীরাও এখন ডেটিংয়ের মাত্রা নির্ধারণে বেশ সক্রিয়। গবেষকেরা বলছেন, নারীরা আমন্ত্রণ জানালে প্রথম ডেটেই যৌনতার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, আধুনিক হুকআপ কালচারে সঙ্গী হিসেবে কাউকে বেছে নেয়ার আগেই তার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ানোর ঘটনা অহরহ ঘটছে। বিষয়টি ১৯২০-এর দশকের প্রচলিত ডেটিংয়ের ধারণাকে বদলে দিচ্ছে।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যানসাসের গবেষক স্যাম কেনড্রিক বলেন, ‘হুকআপ হলো এমন এক সংস্কৃতি যেখানে সঙ্গী বেছে নেয়ার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে যৌন মিলন গুরুত্ব পায়। এতে মনে করা হয় যৌন সম্পর্কের জন্য আপনাকে বিশেষ কোনো সম্পর্কে জড়াতে হবে না।’ সঙ্গী বেছে নেয়ার অংশ হিসেবে পশ্চিমা দেশে ডেটিংয়ের শুরু ১৯২০-এর দশকে। তবে সে সময় ডেটিং বলতে একসঙ্গে সিনেমা দেখার মতো কিছু কর্মকাণ্ড ছিল। এর সঙ্গে যৌনতা যোগ হয় আরও অনেক পরে।
কেনড্রিক বলেন, ‘যৌনতার প্রথাগত ধারণায় এখন আমূল পরিবর্তন এসেছে। ডেটে যৌনতাকে উপেক্ষার বিষয়টিও বদলে গেছে।’ গবেষণার জন্য কেনড্রিক ও তার এক সহকর্মী অনলাইন কলেজ সোশ্যাল লাইফ সার্ভে থেকে নেয়া ডেটা বিশ্লেষণ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ২১টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০০৫ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এ জরিপে চালানো হয়, যাতে অংশ নেন ২৪ হাজার ১৩১ জন।
অংশগ্রহণকারীরা তাদের সাম্প্রতিক ডেটের বর্ণনা দিয়েছেন। এ ছাড়া কে প্রথম ডেটের প্রস্তাব দিয়েছেন, খরচ কার ভাগে পড়েছে, কে প্রথম যৌন সম্পর্কের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, এমন বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অংশগ্রহণকারীরা। গবেষণায় দেখা গেছে, ডেটের প্রস্তাব দেয়া পুরুষের ৫৬ শতাংশের ক্ষেত্রে যৌনতার ঘটনা ঘটেছে। আর নারীর আহ্বান করা ডেটের ৬৩ শতাংশ ক্ষেত্রেই ছিল যৌনতা।
ডেটের সময়ে এই যৌনতাকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা ‘জেনিটাল কন্ট্যাক্ট’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছেন। জেনিটাল কন্ট্যাক্টের মধ্যে যৌন মিলনসহ যৌনাঙ্গ স্পর্শের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ডেটে খরচের ক্ষেত্রে পুরুষ অবশ্য এখনও অনেক বেশি দিলখোলা। পুরুষেরা তাদের প্রস্তাবিত ডেটের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই (৬৮ শতাংশ) অর্থ খরচ করেছেন। নারীরা ১৭ শতাংশ ক্ষেত্রে খরচের কিছুটা বহন করেছেন। আর ১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো অর্থই খরচ হয়নি।
সমাজের প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গি হলো, পুরুষই ডেটে আমন্ত্রণ জানাবেন এবং যাবতীয় সব খরচ বহন করবেন। তবে জরিপে অংশগ্রহণকারী ৮৮ শতাংশ কলেজগামী শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, নারীও পুরুষকে ডেটে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন, এতে কোনো সমস্যা নেই।
গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষ যখন কোনো নারীকে ডেটে নিয়ে যান, তখন নারীরা যৌনতা নিয়ে বেশি রক্ষণশীল থাকেন। কারণ পুরুষের প্রস্তাব করা ডেটে নারীরা যৌন অভিজ্ঞতা বেশি চান না। বিপরীতে নারীর আহ্বান করা ডেটে যৌনতার সম্ভাবনা থাকে বেশি।
গবেষকেরা বলছেন, সাধারণভাবে এখনও পুরুষের পক্ষ থেকেই ডেটের প্রস্তাব বেশি আসছে। জরিপে তথ্য পাওয়া ডেটগুলোর মধ্যে ৮৯.১ শতাংশ প্রস্তাবই এসেছিল পুরুষের কাছ থেকে। তবে এ গবেষণার একটি সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। গবেষকেরা যেসব ডেটা বিশ্লেষণ করেছেন তা ২০১১ সাল পর্যন্ত সময়ে নেয়া। গবেষকদের আশা, অনলাইন কলেজ সোশ্যাল লাইফের দ্বিতীয় ধাপের জরিপ থেকে হালানাগাদ চিত্র পাওয়া যাবে।
এ ছাড়া গবেষণায় কেবল বিষমকামীদের (হেটেরোসেক্সুয়াল) ডেটিংয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এলজিবিটিকিউ সম্পর্ক নিয়েও জানার অনেক কিছু আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।